ভেষজ পাতার গুণাগুণ

কি কি ভেষজ পাতায় কি কি রোগ সারে

প্রকৃতি থেকেই আমরা সব কিছু পেয়ে থাকি। বিভিন্ন রোগ সারাতে গাছ লতাপাতা জুড়ি নেই। এসব উদ্ভিদের পাতা, ফুল, বাকল দিয়েই বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করা হয়। অনেক এমন  ভেষজ উদ্ভিদ আছে যেগুলো ব্যবহার করার ফলে আমরা প্রাথমিকভাবেই আমাদের রোগ নিরাময় করতে পারি। কিন্তু সবাই সেগুলোর সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানিনা। এসব উদ্ভিদের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। প্রাচীনকালে চিকিৎসাশাস্ত্র এত উন্নত ছিল না। কিন্তু কবিরাজরা বিভিন্ন লতা পাতা ও ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করে রোগ নিরাময় করতেন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার জানা।

কয়েকটি ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার সম্পর্কে লেখা হলো:

পাথরচুনা :


পাতা পাথর চুনা পাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ পাতা। প্রসাবে জ্বালাপোড়া
, তলপেটে ব্যথা  রোধে পাথর চুনা কাজ করে থাকে। এ ক্ষেত্রেপাথর চুনা পাতা থেকে রস সংগ্রহ করে তাতে লবণ মিশিয়ে 1 চা চামচ করে সকাল বেলা খালি পেটে 5 দিন খেতে হবে।

শিউলি ফুলের পাতা :

জ্বর প্রতিরোধে শিউলি ফুলের পাতা খুবই উপকারী। এক্ষেত্রে পাতা দিয়ে রস বের করে তাতে সামান্য লবণ মিশিয়ে সাত দিন 1 থেকে 2 চা চামচ খেতে হবে। জ্বর ভালো হয়ে যাবে।
Tulsi Tree
বাসক পাতা ও তুলসী পাতা:

কাশি নিরাময় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে একটানা 7 দিন বাবু তুলসী পাতা ও বাসক পাতার 1 টেবিল চামচ রস খেতে হবে। কাশি নিরাময়ে খুব ভালো টোটকা হিসেবে কাজ করবে।

কালো মেঘের পাতা:


পিত্তজ্বর নিরাময় করতে কালো মেঘের পাতা ভূমিকা পালন করে।  একটানা 7 দিন 1 চা চামচ করে রস খেতে হবে সাথে লবন মিশাতে হবে।

থানকুনি পাতা ও কাঁচকলা :


পেটের সমস্যা সমাধানে থানকুনি পাতা কাঁচা কলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেট ব্যাথা, ডায়রিয়া উপশমে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।  প্রতিদিন খালি পেটে 1 টেবিল চামচ থানকুনি পাতার রস টানা 7 দিন খেতে হবে। কাঁচকলা একটানা চার দিন দিন সেদ্ধ খেতে হবে।

হরতকি :


একটি চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি বিভিন্ন রোগের টোটকা হিসেবে কাজ করে। অশ্ব রোগ, চোখের রোগ, রক্তঅশ্ব, গলা ব্যথা, জন্ডিস, গলার স্বর বসে যাওয়া, বদহজম, হূদরোগ, আমাশয়, বদহজম বিভিন্ন রোগে হরতকির গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন সকালে রাতে ভেজানো এক গ্লাস হরতকি মিশ্রিত জল খালি পেটে পান করুন।

ত্রিফলা:

হরতকি, বহেড়া, আমলকি এই তিনটিকে একসাথে ত্রিফলা বলে। এর গুন অনেক। প্রতিদিন ভোরে রাতে ভেজানো এক গ্লাস ত্রিফলার জল খেলে তার গুনের শেষ নাই। এতে পাচন শক্তি বৃদ্ধি করে। হাঁপানি, পাইলস, কোষ্ঠকাঠিন্য, লিভার, নিরাময় করতে বহেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মেহেদি পাতা :

বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে মেহেদি পাতার জুড়ি নেই। মেহেদি গাছের ছাল ও ফুল বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে টোটকা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। চুল পড়া রোধ, নখের সমস্যা, জন্ডিস, কাধের ব্যাথা, হাত পায়ে জ্বালা, বসন্ত রোগ এগুলো নিরাময় করতে সাহায্য করে।

অশোক:

অশোক একটি চিরহরিৎ বৃক্ষ। এই গাছের বাকল  ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রক্ত আমাশয়, প্রসাবে জ্বালা পোড়া নিরাময় করতে এর শুকনো ফলের গুড়া ব্যবহার করা হয়।

নিম গাছের পাতা :


নিম গাছের পাতা বিভিন্ন রোগের টোটকা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর পাতা দিয়ে বিভিন্ন ওষুধ তৈরি করা হয়। এছাড়া একটি বাড়িতে নিম গাছ থাকলে রোগবালাই কম হয়। এটি ছত্রাক জনিত রোগ, ভাইরাস জনিত রোগ, ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ, ম্যালেরিয়া, দন্ত জনিত রোগ, জন্মনিয়ন্ত্রণে, ব্যাথা মুক্তির ও জ্বর এসব ক্ষেত্রে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

শাল: 


শালের আঠা পচন নিবারক  ও যে কোন ক্ষয় ঘা রোগে ব্যবহার করা হয়। শাল গাছের আঠা প্লাস্টার এর জন্য ব্যবহার করা হয়। শালের রস মেদ কমায়। এছাড়া কৃমি জনিত রোগ, রক্ত আমাশয় এগুলো কমাতে সাহায্য করে।

পলাশ :


পলাশ গাছের ফুল, ছাল, পাতা বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি কৃমি নিরাময়, রক্ত আমাশয়, পেট ব্যাথা, বার বার প্রসাব সারাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

এসব ভেষজ উদ্ভিদ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এসব উদ্ভিদ দিয়ে উন্নত মেডিসিন তৈরি করা হয়। এগুলো ব্যবহারের ফলে আমরা ঘরে বসেই আমাদের রোগ নিরাময়ের সমাধান করতে পারব। এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আমাদের উচিত এসব ভেষজ উদ্ভিদ সম্বন্ধে জানা।

Comments